মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:০৭ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

নৈতিক চরিত্র ছাড়া ইমান মূল্যহীন

ইসলামী জীবন

শাহীন হাসনাত:
সাহাবি হজরত আবু দারদা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, এক হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মুমিন বান্দার দাঁড়িপাল্লায় উত্তম চরিত্র অপেক্ষা অধিক ভারী জিনিস আর কিছুই হবে না। আর যে ব্যক্তি অনর্থক, অশ্লীল ও নিকৃষ্ট ধরনের কথাবার্তা বলে, আল্লাহতায়ালা তাকে মোটেই পছন্দ করেন না।’ – তিরমিজি

বর্ণিত হাদিসে উত্তম ও নৈতিক চরিত্রের গুরুত্ব ফুটে উঠেছে। নবী করিম (সা.) ইমানের পর নৈতিক চরিত্রের বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। নৈতিক চরিত্র ছাড়া ইমান মূল্যহীন। উত্তম ও নৈতিক চরিত্র মানুষের যাবতীয় কল্যাণের উৎস। ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যার চরিত্র সর্বোত্তম। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি তিনি।’ -বোখারি ও মুসলিম

রাসুলে কারিম (সা.)-এর আগমনের প্রধান উদ্দেশ্যে হলো মানুষের মন-মগজ, চরিত্র ও কার্যাবলিকে নির্মল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও নিষ্কলুষ করে তোলা এবং সর্বপ্রকার কদর্যতা থেকে মুক্ত করা। স্বয়ং হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার আগমনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, ‘উত্তম নৈতিক চরিত্রের পরিপূর্ণতার জন্যই আমি প্রেরিত হয়েছি।’ -বায়হাকি

গোটা মুসলিম উম্মাহ তথা মানবজাতির চরিত্রের উপমা হলেন নবী মুহাম্মদ (সা.)। তার সততা, নৈতিকতা ও চরিত্র প্রেরণা জোগায়। আদর্শ শাসক থেকে শুরু করে আদর্শ পিতা, ন্যায়পরায়ণ বিচারক, চৌকস সেনাপতি, কর্মনিষ্ঠ শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের চরিত্রের দর্পণ তিনি। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘(হে নবী!) নিশ্চয় আপনি মহান ও উন্নত চরিত্রের ওপরে অধিষ্ঠিত।’ -সুরা আল কালাম: ৪

অন্য আয়াতে মানবজাতিকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অবশ্যই হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।’ -সুরা আল আহজাব: ২১

নবী করিম (সা.) উন্নত নৈতিক চরিত্রের ব্যাপারে অত্যধিক গুরুত্বারোপ করেছেন, কেননা ইমানের পূর্ণতা উন্নত নৈতিক চরিত্রের ওপর নির্ভরশীল। নৈতিক চরিত্রের দিক দিয়ে যে যত উন্নত, তার ইমান তত পরিপূর্ণ। অন্যকথায়, উন্নত নৈতিক চরিত্র পূর্ণ ইমানের অনিবার্য ফল বিশেষ। অতএব যার ইমান যত পরিপূর্ণ, তার চরিত্র তত উন্নত হবে এবং যার চরিত্র উন্নত, মনে করতে হবে, তিনি একজন পূর্ণাঙ্গ ইমানদার। রাসুলের হাদিসে প্রতীয়মান হয়, ‘মুমিনদের মধ্যে সর্বাধিক পূর্ণ মুমিন সেই ব্যক্তি, যার নৈতিক চরিত্র তাদের মধ্যে সর্বোত্তম।’ – তিরমিজি

বর্ণিত হাদিসে উত্তম চরিত্রের পরকালীন ফলাফল ও পুরস্কার সম্পর্কে বলা হয়েছে। তাহলো- কিয়ামতের দিন ইমানদার ব্যক্তির আমলনামা যখন ওজন করা হবে তখন উত্তম চরিত্র ওজনের পাল্লায় ভারী হবে, উত্তম চরিত্র তার নাজাতের অসিলা হবে। এর অর্থ, ইমানদার ব্যক্তিমাত্রই দুনিয়ায় উত্তম চরিত্রবান হবেন। কেননা ইমান ও উত্তম নৈতিক চরিত্রের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। হাদিসে মন্দ ও খারাপ চরিত্রের একটি বিশেষ গুরুতর দিক দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তা হচ্ছে, অশ্লীল কথা বলা এবং বেহুদা, বাজে ও নীচ-হীন কথাবার্তা বলা। কথা মানুষের মনোভাব ও চিন্তাধারার বাহন। মানুষের অন্তরের ভাবধারাও অভ্যন্তরীণ প্রকৃতরূপের প্রকাশ ঘটে মুখের ভাষায়। এ জন্য হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মানবিক চরিত্র উন্নয়নের জন্য সব ধরনের অশ্লীল কথাবার্তা পরিত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। নবী করিম (সা.) ঘোষণা করেছেন, যারা এ জাতীয় চরিত্রের অধিকারী আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন না। তাদের প্রতি মহান রবের অপরিসীম ক্রোধ ও অসন্তুষ্টি। যাদের প্রতি মহান আল্লাহর ক্রোধ থাকে তাদের ভবিষ্যৎ কখনো কল্যাণময় হতে পারে না। এ ছাড়া তাদের অসৎ চরিত্র বিচারের পাল্লাকে হালকা করে দেবে যা তাদের জন্য অত্যন্ত আফসোসের কারণ হবে।

নবী করিম (সা.)-এর নবুয়তের মূল লক্ষ্য ছিল- মানবজীবনের সামগ্রিক দিক ও ক্ষেত্রের জন্য নৈতিক চরিত্রের অপূর্ব ও উজ্জ্বল নিদর্শন সংস্থাপন করা। মূলত দ্বীন ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য নবী করিম (সা.) যত কাজ করেছেন, কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তার চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল- মানুষের সামনে চূড়ান্তভাবে নৈতিক চরিত্রের মাহাত্ম্যকে উদ্ভাসিত করে তোলা। হজরত আয়েশা (রা.) কে রাসুলের চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘রাসুলের চরিত্র ছিল আল কোরআন।’ কোরআনে নৈতিকতা ও উত্তম চরিত্র অর্জন এবং যাবতীয় অনৈতিকতাকে বর্জন করতে বলা হয়েছে। কোরআনে কারিমের এই আদেশ নবী করিম (সা.) অসংখ্য হাদিসে নানা প্রসঙ্গে নানাভাবে বর্ণনা করেছেন।

নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘উত্তম চরিত্রের অধিকারীরা কিয়ামতের দিন তার (নবীর) প্রিয়পাত্র হিসেবে গণ্য হবেন এবং বিশেষ মর্যাদা লাভ করবেন। এর বিপরীতে অসৎ চরিত্রের ব্যক্তিরা তার (নবীর) কাছে ঘৃণার পাত্র হবে। হজরত যাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে আমার কাছে অধিক প্রিয় এবং কিয়ামতের দিন মর্যাদার দিক দিয়ে অধিক নিকটবর্তী হবে সেসব মানুষ, যারা নৈতিক চরিত্রের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। পক্ষান্তরে তোমাদের মধ্যে আমার কাছে অধিকতর ঘৃণিত এবং কিয়ামতের দিন আমার থেকে অধিক দূরে থাকবে তারা, যারা কথা বলার সময় কৃত্রিমতা ও কপটতার আশ্রয় নেয় এবং দ্রুত ও লম্বা লম্বা কথা বলে মানুষকে অতিষ্ঠ করে তোলে এবং কথার মাধ্যমে নিজের বাহাদুরি প্রকাশ করে এবং অহংকার পোষণ করে।’ – তিরমিজি

সুতরাং, প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের কর্তব্য হলো- নবী করিম (সা.) ও তার সাহাবিদের অনুকরণের মাধ্যমে উন্নত নৈতিক চরিত্র অর্জন করা। বিশেষ করে, ইসলাম প্রচারের কাজে নিয়োজিতদের অবশ্যই উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। জীবনের সবক্ষেত্রে সফল হতে হলে, উত্তম চরিত্র ও আদর্শের কোনো বিকল্প নেই।

লেখক : মুফতি ও ইসলামবিষয়ক

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION